.sidebar .widget-content { font-size: 50px !important; }

Ad Code

Responsive Advertisement

Build-Own-Operate (BOO) মডেল: সহজ ভাষায় বিস্তারিত বিশ্লেষণ

বর্তমান বিশ্বে অবকাঠামো উন্নয়ন ও সেবা প্রদান ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও লাভজনক করতে বিভিন্ন ধরনের পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (PPP) মডেল ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ মডেল হলো Build-Own-Operate (BOO)। এই মডেলটি অনেক ক্ষেত্রে সরকার এবং বেসরকারি খাতের মধ্যে কার্যকর সহযোগিতার একটি ভালো উদাহরণ।

চলুন সহজ ভাষায় বুঝে নিই – BOO মডেল কী, কীভাবে এটি কাজ করে, এর সুবিধা ও চ্যালেঞ্জগুলো কী।

BOO মডেল কী?

BOO (Build-Own-Operate) মডেল এমন একটি ব্যবসায়িক চুক্তি বা প্রকল্প কাঠামো, যেখানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কোনো অবকাঠামো নির্মাণ (Build) করে, তার মালিকানা গ্রহণ করে (Own) এবং সেটি চালায় বা পরিচালনা করে (Operate)

এই মডেলে, প্রতিষ্ঠানটি প্রকল্পটির পুরো মালিক থাকে এবং দীর্ঘমেয়াদে সেটি পরিচালনা করে লাভ উপার্জন করে।

সংক্ষেপে:

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান: নির্মাণ করে + মালিকানা রাখে + পরিচালনা করে

কীভাবে BOO মডেল কাজ করে?

একটি উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাক:

ধরা যাক, একটি শহরে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রয়োজন। সরকার একটি বেসরকারি কোম্পানিকে BOO মডেলে এই প্রকল্পের দায়িত্ব দিলো। তখন সেই কোম্পানি:

  1. নিজস্ব অর্থায়নে বা ব্যাংক ঋণ নিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে (Build),
  2. সেটির সম্পূর্ণ মালিকানা নিজের কাছে রাখবে (Own),
  3. এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে বাজারে বিক্রি করবে ও পরিচালনা করবে (Operate)

সরকার কেবলমাত্র প্রয়োজনীয় অনুমোদন, জমি বরাদ্দ অথবা আইনগত সহায়তা দিতে পারে, তবে প্রকল্পের নিয়ন্ত্রণ বা মালিকানা নেয় না।

 BOO মডেল ও BOOT মডেলের পার্থক্য

অনেকে BOO মডেলকে BOOT (Build-Own-Operate-Transfer) মডেলের সাথে গুলিয়ে ফেলেন। দুটির মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো “Transfer” অংশে।

বিষয় BOO BOOT
মালিকানা স্থায়ীভাবে বেসরকারি কোম্পানির নির্ধারিত সময় পরে সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে হয়
সময়কাল দীর্ঘমেয়াদি বা স্থায়ী নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারিত
ব্যবহারিক ক্ষেত্র বিদ্যুৎ, পানি, টেলিকম, ডেটা সেন্টার ইত্যাদি সেতু, রেললাইন, টার্মিনাল ইত্যাদি

BOO মডেলের সুবিধাসমূহ

  1. সরকারের অর্থ সাশ্রয়: সরকারকে প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে হয় না।
  2. দক্ষতা ও প্রযুক্তির ব্যবহার: বেসরকারি খাত আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিয়ে আসে।
  3. দ্রুত বাস্তবায়ন: বেসরকারি খাত সাধারণত সময়মতো প্রকল্প শেষ করে।
  4. উদ্ভাবনী সমাধান: বেসরকারি কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে উদ্ভাবনী উপায় খোঁজে।

চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি

  1. মূল্য নির্ধারণের স্বচ্ছতা: বেসরকারি কোম্পানি মূল্য বাড়াতে পারে, যদি নিয়ন্ত্রণ না থাকে।
  2. জনস্বার্থ উপেক্ষা: শুধুমাত্র লাভের পেছনে ছুটলে জনগণের উপকার না-ও হতে পারে।
  3. চুক্তির জটিলতা: দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে সরকার ও কোম্পানির মধ্যে দ্বন্দ্ব হতে পারে।
  4. নিয়ন্ত্রণহীনতা: সরকার সরাসরি মালিক না হওয়ায় অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।

কোথায় কোথায় BOO মডেল ব্যবহার হয়?

  • বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র
  • জলাশয় ও পানি বিশুদ্ধকরণ প্রকল্প
  • টেলিকম নেটওয়ার্ক ইনফ্রাস্ট্রাকচার
  • ডেটা সেন্টার ও ক্লাউড ইন্ডাস্ট্রি
  • পেট্রোলিয়াম পরিশোধনাগার
  • বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প

উপসংহার

BOO মডেল একটি কার্যকর পদ্ধতি যা অবকাঠামোগত উন্নয়নে বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে। তবে এটি সফল করতে হলে সরকারকে চুক্তি প্রণয়নে স্বচ্ছতা, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং জনস্বার্থ রক্ষার দিকটি মাথায় রেখে কাজ করতে হয়।

যতই দিন যাচ্ছে, ততই দেখা যাচ্ছে যে BOO মডেল উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে — যদি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয়।

Post a Comment

0 Comments

Ad Code

Responsive Advertisement