প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টে (PMP) একটি বাস্তব সত্য আছে—
যেখানে মানুষ আছে, সেখানে মতভেদ থাকবে।
আর সেই মতভেদ সঠিকভাবে সামলানোই প্রকল্প সফলতার অন্যতম চাবিকাঠি।
কিন্তু শুধু কনফ্লিক্ট ম্যানেজ করাই যথেষ্ট নয়—
দল ও স্টেকহোল্ডারদের সাথে কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট নীতিগুলো স্পষ্টভাবে যোগাযোগ করা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা।
এর মাধ্যমে সবাই একই নিয়মে কাজ করে, একই প্রত্যাশা ধরে রাখে এবং যেকোনো সমস্যাকে আবেগ নয়, প্রক্রিয়া অনুযায়ী সমাধান করতে শেখে।
এই ব্লগে আমরা দেখব—
✔ কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট নীতিমালা কী
✔ কেন এগুলো টিম ও স্টেকহোল্ডারদের সাথে ভাগ করা প্রয়োজন
✔ কীভাবে কার্যকরভাবে যোগাযোগ করতে হবে
✔ বাস্তব উদাহরণসহ প্র্যাকটিক্যাল টুলস
কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট নীতিমালা কী?
কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট নীতিমালা হলো—
দল যখন কোনো দ্বন্দ্ব বা বিরোধের সম্মুখীন হবে, তখন কীভাবে আচরণ করবে, কোন ধাপ অনুসরণ করবে, এবং কী ধরনের পেশাদার মান বজায় রাখবে—সেসব নির্দেশনা।
এগুলো সাধারণত অন্তর্ভুক্ত করে:
- পরস্পরের প্রতি সম্মান বজায় রাখা
- তথ্যভিত্তিক আলোচনা
- অভিযোগ নয়—সমাধানমুখী কথোপকথন
- Active listening
- দোষারোপ এড়িয়ে যৌথভাবে সমাধান খোঁজা
- প্রয়োজন হলে PM বা থার্ড-পার্টি Mediator–এর সহায়তা নেওয়া
- লিখিত প্রটোকল অনুসরণ করা
কেন টিম ও স্টেকহোল্ডারদের সাথে এগুলো যোগাযোগ করা জরুরি?
✔ ১. প্রত্যাশা একসাথে সেট করা
যেকোনো সমাধানের আগে নিয়ম জানা দরকার।
নীতিমালা শেয়ার করলে সবাই জানে কোন সীমা পর্যন্ত কী বলা যায় এবং কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে।
✔ ২. ভুল বোঝাবুঝি কমে
সঠিক নিয়ম না জানলে সাধারণ কাজ থেকেও বড় কনফ্লিক্ট তৈরি হতে পারে।
✔ ৩. কাজের পরিবেশ সুশৃঙ্খল হয়
মানুষ বুঝতে পারে—
“এখানে সমস্যাকে সমস্যা হিসেবে দেখা হয়, ব্যক্তিগত আক্রমণ হিসেবে নয়।”
✔ ৪. স্টেকহোল্ডাররাও বুঝতে পারে সমাধানের পথ
এর ফলে অকারণ চাপ, রাজনৈতিক প্রভাব, বা মতবিরোধ দ্রুত কমে যায়।
কীভাবে কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট নীতিমালা যোগাযোগ করবেন?
এটি চারটি ধাপে করা সবচেয়ে কার্যকর।
১. প্রজেক্ট শুরুর সময় টিম চার্টার/গ্রাউন্ড রুলে নীতিমালা যুক্ত করা
প্রজেক্ট কিক-অফ মিটিং-এর সময় এটি করা সবচেয়ে ভালো।
উদাহরণ:
- “মতভেদ হলে সবাই প্রথমে ফ্যাক্ট চেক করবে।”
- “সরাসরি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাথে আলোচনা করা হবে, অন্যকে জড়ানো হবে না।”
- “আবেগ নয়—ডেটা ও রিকোয়ারমেন্টের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে।”
২. নিয়মিত টিম মিটিং-এ রিফ্রেশার শেয়ার করা
এটি ভুলে যাওয়া মানুষের স্বাভাবিক স্বভাব। তাই সময় সময় টিম মিটিং-এ স্মরণ করানো জরুরি।
উদাহরণস্বরূপ:
“গত সপ্তাহে আমরা কিছু ডিসএগ্রিমেন্টের সম্মুখীন হয়েছিলাম। মনে করিয়ে দিচ্ছি, আমরা সমস্যা নিয়ে নয়, সমাধান নিয়ে কথা বলি।”
৩. স্টেকহোল্ডার কমিউনিকেশন প্ল্যানে নীতিমালা যোগ করা
যেসব স্টেকহোল্ডার প্রকল্পে প্রভাব রাখেন (ক্লায়েন্ট, সাপ্লায়ার, বিভাগীয় ম্যানেজার ইত্যাদি), তাঁদেরও জানতে হবে—
- বিরোধের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা কী
- কোন কথায় হস্তক্ষেপ করা যাবে
- আলোচনার নিয়ম কী
উদাহরণস্বরূপ:
“স্টেকহোল্ডারদের সাথে যেকোনো কনফ্লিক্ট হলে PM–এর উপস্থিতিতে আলোচনায় অংশ নেওয়া হবে।”
৪. কনফ্লিক্ট চলাকালীন নীতিমালা রিমাইন্ডার ব্যবহার করা
সমস্যা শুরু হলে কাউকে দোষারোপ না করে নীতিমালায় ফিরে যান।
উদাহরণ:
“চলুন, আমরা আমাদের গ্রাউন্ড রুল অনুযায়ী ফ্যাক্ট-ভিত্তিকভাবে বসে বিষয়টি পরিষ্কার করি।”
প্র্যাকটিক্যাল উদাহরণ (Real-Life Scenarios)
উদাহরণ–১: ডিজাইন টিম বনাম ডেভেলপমেন্ট টিম
কনফ্লিক্ট:
ডিজাইন টিম বলে তাদের UI সঠিক, ডেভেলপার বলে এটা কাজ করবে না।
PM কী করল:
- দুই দলকে নিয়ে মিটিং-এ কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট নীতিমালা রিমাইন্ড করাল
- “দোষারোপ নয়—চলুন ডেটা ও ইউজ-কেস দেখে সিদ্ধান্ত নিই”
- একটি ফ্যাক্ট-চেকিং সেশন হলো
- দুই দল যৌথভাবে সমাধান তৈরি করল
ফলাফল:
কাজ দ্রুত এগোল, সম্পর্ক ভালো থাকল।
উদাহরণ–২: বাহ্যিক স্টেকহোল্ডারের চাপ
একজন ক্লায়েন্ট সরাসরি একজন জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ারকে ফোন করে পরিবর্তন দাবি করলেন। যার ফলে কাজের ভুল ধাপ শুরু হয়ে যায়।
PM কী করল:
- ক্লায়েন্টকে বিনয়ের সাথে নীতিমালা জানিয়ে দিল:
“যেকোনো পরিবর্তন Change Control Process এর মাধ্যমে যাবে।”
- টিমকে শেখাল—
“সরাসরি কোনো স্টেকহোল্ডার যোগাযোগ করলে আমাকে জানাবে।”
ফলাফল:
ঝামেলা কমে গেল, ভবিষ্যতে আর কোনো শর্টকাটে কাজ হয়নি।
উদাহরণ–৩: টিম সদস্যদের ব্যক্তিগত ভুল বোঝাবুঝি
দুজন সদস্য পরস্পরকে দোষারোপ করে কাজ বন্ধ করে দেয়।
PM কী করল:
- প্রথমে দুজনকেই আলাদাভাবে নীতিমালা রিমাইন্ড করে
- পরে যৌথ মিটিং-এ active listening প্র্যাকটিস করাল
- "আমি" নয়, "আমাদের" দিয়ে বাক্য গঠন করার নিয়ম ব্যাখ্যা করল
- সমস্যার মূল–চাহিদা ও ভুল যোগাযোগ–স্পষ্ট করে দিল
ফলাফল:
দুজন সদস্য আগের চেয়ে ভালোভাবে কাজ করতে শুরু করল।
PM–এর জন্য কার্যকর কিছু কমিউনিকেশন টিপস
✔ Neutral ভাষা ব্যবহার করুন
“তুমি ভুল করেছো” নয়
→ “এখানে আমাদের প্রক্রিয়াটি হয়তো ঠিকভাবে অনুসরণ হয়নি।”
✔ আবেগ নয়—ফ্যাক্ট তুলে ধরুন
✔ Body language ও Tone নিয়ন্ত্রণ করুন
✔ আলোচনা শেষে Action points লিখে দিন
✔ নিয়ম ভাঙলে বন্ধুত্বপূর্ণ কিন্তু assertive রিমাইন্ডার দিন
শেষ কথা
কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট PMP–র একটি মৌলিক সক্ষমতা।
কিন্তু সবচেয়ে শক্তিশালী অংশটি হলো—
এই নীতিগুলো টিম ও স্টেকহোল্ডারদের কাছে স্পষ্টভাবে পৌঁছানো।
কারণ যোগাযোগ পরিষ্কার হলে—
✔ ভুল বোঝাবুঝি কমে
✔ কাজের গতি বাড়ে
✔ টিম আরও পরিপক্ব হয়
✔ প্রকল্প সঠিকভাবে এগিয়ে যায়
ভালো নেতৃত্ব মানে শুধু সিদ্ধান্ত দেওয়া নয়,
বরং মানুষকে একটি সুস্থ, স্বচ্ছ ও সম্মানজনক পরিবেশে কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া।
0 Comments