.sidebar .widget-content { font-size: 50px !important; }

Ad Code

Responsive Advertisement

ডায়োড (Diode): একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা

ইলেকট্রনিক্স জগতে ডায়োড (Diode) একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মৌলিক উপাদান। এটি এমন একটি সেমিকন্ডাক্টর (Semiconductor) ডিভাইস যা একদিকে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে দেয় এবং অন্যদিকে বাধা দেয়। অর্থাৎ, এটি বিদ্যুৎ প্রবাহকে একদিকে নিয়ন্ত্রণ করে, অনেকটা একমুখী ভালভের মতো।

 ডায়োডের গঠন (Structure of Diode)

একটি সাধারণ ডায়োড তৈরি হয় দুটি সেমিকন্ডাক্টর স্তর দিয়ে—

  1. P-type Semiconductor – এখানে থাকে positive (hole) চার্জ ক্যারিয়ার।
  2. N-type Semiconductor – এখানে থাকে negative (electron) চার্জ ক্যারিয়ার।

দুটি স্তর সংযুক্ত হলে তৈরি হয় একটি P-N Junction। এই সংযোগস্থলেই ঘটে মূলত ডায়োডের কার্যক্রম।

 ডায়োডের কাজ করার পদ্ধতি (Working Principle of Diode)

1. ফরওয়ার্ড বায়াস (Forward Bias)

যখন P-side ব্যাটারির ধনাত্মক (positive) প্রান্তে এবং N-side ঋণাত্মক (negative) প্রান্তে যুক্ত থাকে, তখন ডায়োডটি চালু (ON) অবস্থায় থাকে।
👉 এই অবস্থায় বিদ্যুৎ সহজে প্রবাহিত হয়।
এটাই হলো Forward Bias Condition

Diode এর Forward Bias I/V Characteristics

ডায়োডের Forward Characteristics বলতে বোঝায় — যখন ডায়োডটি Forward Bias অবস্থায় থাকে (অর্থাৎ, P-side ব্যাটারির ধনাত্মক এবং N-side ঋণাত্মক প্রান্তে যুক্ত থাকে), তখন ভোল্টেজ ও কারেন্টের মধ্যে সম্পর্ক কেমন হয়। এই অবস্থায় ডায়োডের potential barrier ধীরে ধীরে কমে যায়, এবং একটি নির্দিষ্ট threshold voltage বা cut-in voltage অতিক্রম করার পর দ্রুত কারেন্ট প্রবাহ শুরু হয়। সিলিকন ডায়োডের ক্ষেত্রে এই ভোল্টেজ প্রায় 0.7 V, আর জার্মেনিয়াম ডায়োডের ক্ষেত্রে প্রায় 0.3 V। শুরুতে কারেন্ট খুব কম থাকে, কিন্তু থ্রেশহোল্ড ভোল্টেজ পার হলেই কারেন্ট দ্রুত বৃদ্ধি পায়, যা গ্রাফে দেখা যায় একটি তীক্ষ্ণ ঊর্ধ্বমুখী বক্ররেখা হিসেবে। এই বৈশিষ্ট্যই ডায়োডকে একদিকীয় বিদ্যুৎ পরিবাহক হিসেবে কাজ করতে সক্ষম করে।

2. রিভার্স বায়াস (Reverse Bias)

যখন P-side negative এবং N-side positive প্রান্তে যুক্ত থাকে, তখন ডায়োডটি বন্ধ (OFF) অবস্থায় থাকে।
👉 এই অবস্থায় বিদ্যুৎ প্রবাহ প্রায় বন্ধ থাকে।
এটাই Reverse Bias Condition

Diode এর Reverse Bias I/V Characteristics

ডায়োডের Reverse Characteristics বলতে বোঝায় — যখন ডায়োডটি Reverse Bias অবস্থায় থাকে, অর্থাৎ P-side ব্যাটারির ঋণাত্মক (negative) প্রান্তে এবং N-side ধনাত্মক (positive) প্রান্তে যুক্ত থাকে, তখন ডায়োডের ভোল্টেজ ও কারেন্টের সম্পর্ক কেমন হয়। এই অবস্থায় depletion layer অনেক প্রশস্ত হয় এবং মূলত কারেন্ট প্রবাহ প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। কেবলমাত্র খুব ক্ষুদ্র পরিমাণ reverse saturation current (I₀) প্রবাহিত হয়, যা minority charge carriers দ্বারা সৃষ্টি হয়। কিন্তু যদি রিভার্স ভোল্টেজ একটি নির্দিষ্ট সীমা — যাকে breakdown voltage বলা হয় — অতিক্রম করে, তাহলে ডায়োড হঠাৎ করে প্রচুর কারেন্ট পরিবাহিতা শুরু করে। এই ঘটনাকে বলে breakdown (যেমন Zener breakdown বা Avalanche breakdown)। সাধারণ ডায়োডে এটি ক্ষতিকর হলেও, Zener Diode-এ এই বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রিতভাবে ভোল্টেজ রেগুলেশনের জন্য ব্যবহৃত হয়।

ডায়োডের কাজের মূলনীতি (Basic Principle)

ডায়োড কাজ করে rectification principle অনুযায়ী — অর্থাৎ AC (Alternating Current) কে DC (Direct Current) তে রূপান্তরিত করে।
এই কারণেই ডায়োডকে প্রায়ই বলা হয় Rectifier

ডায়োডের প্রধান প্রকারভেদ (Types of Diode)

প্রকার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা
1. PN Junction Diode সবচেয়ে সাধারণ ডায়োড, মূলত রেক্টিফিকেশনের কাজে ব্যবহৃত হয়।
2. Zener Diode নির্দিষ্ট রিভার্স ভোল্টেজে স্থিতিশীল ভোল্টেজ প্রদান করে; ভোল্টেজ রেগুলেশনে ব্যবহৃত।
3. Light Emitting Diode (LED) বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে আলো নির্গত করে; ডিসপ্লে ও লাইটিং-এ ব্যবহৃত।
4. Photodiode আলো পড়লে কারেন্ট তৈরি করে; সেন্সর ও ক্যামেরায় ব্যবহৃত।
5. Schottky Diode দ্রুত সুইচিং এবং কম ফরওয়ার্ড ভোল্টেজ ড্রপ দেয়।
6. Varactor (Varicap) Diode ভোল্টেজ-নিয়ন্ত্রিত ক্যাপাসিটরের মতো কাজ করে; টিউনিং সার্কিটে ব্যবহৃত।
7. Tunnel Diode অত্যন্ত উচ্চ গতির সার্কিটে ব্যবহৃত হয়, কারণ এতে “negative resistance” দেখা যায়।

ডায়োডের প্রধান ব্যবহার (Applications of Diode)

  1. Rectification: AC থেকে DC রূপান্তর করতে।
  2. Signal Demodulation: রেডিও ও কমিউনিকেশন সার্কিটে ব্যবহৃত হয়।
  3. Voltage Regulation: জেনার ডায়োড দিয়ে নির্দিষ্ট ভোল্টেজ ধরে রাখা হয়।
  4. Overvoltage Protection: সার্কিটকে অতিরিক্ত ভোল্টেজ থেকে রক্ষা করে।
  5. LED Lighting: আলো উৎপন্ন করতে।
  6. Logic Gates এবং Switching Circuits: দ্রুত ইলেকট্রনিক অপারেশনে ব্যবহৃত হয়।

ডায়োডের সুবিধা ও অসুবিধা

 সুবিধা:

  • সাইজে ছোট ও হালকা
  • কম খরচে উৎপাদনযোগ্য
  • দক্ষভাবে রেক্টিফিকেশন করতে সক্ষম
  • উচ্চ গতির সুইচিং সম্ভব

অসুবিধা:

  • রিভার্স ভোল্টেজে ব্রেকডাউন হতে পারে
  • তাপমাত্রার পরিবর্তনে পারফরম্যান্স কমে যেতে পারে

উপসংহার

ডায়োড হলো আধুনিক ইলেকট্রনিক্সের অন্যতম ভিত্তি। মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে কম্পিউটার, চার্জার, রেডিও — প্রতিটি ইলেকট্রনিক যন্ত্রের ভেতরই কোনো না কোনোভাবে ডায়োড ব্যবহৃত হয়।
এর সহজ নকশা, কার্যকারিতা ও বহুমুখী ব্যবহার একে করে তুলেছে ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একটি অপরিহার্য উপাদান।

Post a Comment

0 Comments

Ad Code

Responsive Advertisement